স্কুল শাখায় ২০১৭ সনের জন্য ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল জেনে নিন

২০১৭ সনের জন্য স্কুল শাখায় বিভিন্ন শ্রেণিতে গৃহীত ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে । ফলাফল জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন



ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল জানতে  এখানে ক্লিক করুন


BMARPS


বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর সদর দপ্তর পিলখানায় সুনিবিড়, শান্ত ও মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত একটি সুশৃঙ্খল ও অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে বাংলা  এবং ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ সকলে অত্যন্ত মেধাবী এবং যোগ্যতাসম্পন্ন। প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারক ও পরিচালণা পর্ষদে আছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর মহাপরিচালকসহ উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতির সকল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও‍ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে যথাযথ কারিকুলাম, বইপত্র এবং শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়ে থাকে।


সহশিক্ষামুলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিএনসিসি, স্কাউট, গাইড, বিতর্ক ক্লাব, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক ক্লাব, ক্রীড়া, বিজ্ঞান ক্লাবসহ রয়েছে সব ধরনের সহ-পাঠক্রমিক উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনা। পিলখানার অভ্যন্তরে পরিবহন সুবিধাসহ দূরবর্তী শিক্ষার্থীদের জন্য সুলভে প্রয়োজনীয় যানবাহনের ব্যবস্থা আছে। 

ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল জানতে  এখানে ক্লিক করুন



ক্যাম্পাস স্মৃতি



সময়ের নাটাইয়ে স্মৃতির ঘুড়ি


দেশটা এক ডানাভাঙা পাখির মত বুক ভরা আশা আর শরীরে অজস্র ক্ষত নিয়ে যখন উড়ে বেড়াচ্ছে, আমি তখন যাত্রা শুরু করলাম পুরনো দিনের পথে। চোখ বন্ধ করতেই স্মৃতিরা হেসে উঠল, আমাকে টানতে টানতে নিয়ে গেল বাংলাদেশ রাইফেলস স্কুলের দরজায়। মনে হল, সোনার কাঠি, রুপার কাঠির ছোঁয়া দিলেই স্কুলটা জেগে উঠবে, আমাকে ডেকে বলবে, আয় রে, একদিনের জন্য হলেও ফিরে আয়। আমার প্রাণের স্কুলের অগুনতি স্মৃতি আজো ক্ষণে ক্ষণে আমার গালে নাক ঘষে, আদুরে বেড়ালের মত গুটিসুটি মেরে আমার পাশ ঘেঁসে বসে একটু উষ্ণতার জন্য।
মনে পড়ে যায় স্কুল ক্যান্টিনের কথা। প্রথম ক্যান্টিনটা ছিল মূল ভবনের নিচ তলায় পেছনের দিকে। ছোট্ট একটা ঘর সিঙ্গারা, সমুচার গন্ধে ম ম করত। টিফিন শুরু হওয়ার বেশ কিছুক্ষণ আগে না গেলে খাবার পাওয়ার কোন সুযোগ ছিল না। ছোট্ট রুমে গাদাগাদি করে সবাই মামা মামা করে চিৎকার করছে আর ক্যান্টিনের গণ-মামারা সবাইকে ব্যস্ত হয়ে বাদামি কাগজের ঠোঙ্গায় খাবার দিচ্ছে- এ ছিল নিত্যদিনের দৃশ্য। খাবার নিয়ে ক্লাসে ফিরে আসতে আসতে ততক্ষণে বাদামি ঠোঙ্গা, হাত সব তেলে মাখামাখি হয়ে যেত। তবু ঐ একটা সিঙ্গারা ৪/৫ জন ভাগাভাগি করে খেত। সেই ঠা-া সিঙ্গারার সামনে বাসার সব নাস্তা ফেল। আর এক কামড় খেলে পানিতে পড়তে হবে, তাই সবাই বাধ্যতামূলকভাবে দুই কামড় খেত। যদিও আমাদের বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না যে কেন একবার খেলে পানিতে পড়তে হবে, এবং পানিতে কি নিজে নিজে পড়ব, নাকি কেও পেছন থেকে একটা জুতসই ধাক্কা দেবে।
স্কুল জীবন আর কলেজ জীবন দুটোই কেটেছে এই প্রতিষ্ঠানে। স্কুল বলতেই চোখে ভাসে সকালের পিটি, ক্লাসে পেছনে বসে চিঠি চালাচালি আর স্কুলের মাঠে খামাখা দৌড়াদৌড়ি। আর ছিল মূল্যায়ন পরীক্ষার ঝুম বৃষ্টি, ক্লাস ফাইভে আর এইটে। মনে পড়ছে, রোকেয়া আপা, মাহবুবা আপা, মঞ্জুয়ারা আপা, খাদিজা আপা, মোখলেস স্যার, মাহবুব স্যার, মফিজ স্যারের কথা। ভূগোলের জাদুকর ইকবাল স্যার, বিশ্বের সব দেশের বৃত্তান্ত ঠোঁটের আগায়। স্বচ্ছ কাচের মত নূরুল ইসলাম স্যারের গল্প-কবিতা বলা, বাংলা সাহিত্যের তেতোমিঠে স্বাদ নিতে শেখালেন তিনি। এইম ইন লাইফ জিজ্ঞেস করলে সবাই ডাক্তার হতে চাইত, কোন দিন ক্লাস আগে ছুটি হলে সবার মধ্যে প্রবল উত্তেজনা দেখা দিত। তখন সবচে সাহসের কাজ ছিল দারোয়ানের চোখ এড়িয়ে স্কুল থেকে বের হয়ে বিডিআরের সুইমিং পুলের কাছে যাওয়া।
ডিসেম্বর মাস এলেই শুরু হত বিজয় দিবসের প্যারেড আর ডিসপ্লে। প্যারেড ও ডিসপ্লে ফাঁকি দেওয়ার ১০১ টি উপায়, এই ধরনের বই লেখার ক্ষমতা ছিল স্কুলের বেশির ভাগ ছাত্র ছাত্রীর। যদিও সবাই করুণভাবে ধরা পড়ত বেশির ভাগ সময়। স্কুলের এক দিকের সিঁড়ি দিয়ে আসাদ স্যার চিকন বেত ঘুরাতে ঘুরাতে উঠছেন আর ছোটখাট হুঙ্কার দিচ্ছেন- এটা ছিল ডিসেম্বর মাসের প্রায় প্রতিদিনের চিত্র। স্যার যখন বিল্ডিঙের দোতলায়, পলায়নরত ছাত্র ছাত্রী তখন তিন তলায়।
কিছুক্ষণ এই লুকোচুরি খেলার পর অপরিসীম দক্ষতার সাথে স্যার বেঞ্চের নিচ থেকে, বাথরুমের দরজার পাশ থেকে, সিঁড়ির কোণা থেকে অপরাধীদের ধরে নিচে নিয়ে আসতেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই অপরাধীর প্রমোশন হত গার্লস স্কাউট বা গার্ল গাইডসের সদস্য হিসেবে। আধ ঘণ্টা পর দেখা যেত সেই সদস্য মাঠের কোণায় বসে কচি ঘাস চাবাচ্ছে (স্কাউটে শেখান হয়েছিল শরীরের কোন জায়গা কেটে গেলে রক্ত বন্ধ করার জন্য কচি ঘাসের রস লাগাতে হয়)। নয়ত যেতে হতডিসপ্লে বা প্রশান্ত স্যারের পরিচালনায় লাঠি খেলায় (সরি, খেলাটার আসল নাম মনে করতে পারছি না, শুধু মনে পড়ছে মেয়েরা গোল হয়ে দাঁড়াত, সবার হাতে দুটো করে ছোট লাঠি থাকত)।
স্কুলে একবার ম্যাগি নুডুলসের পক্ষ থেকে নুডুলস খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হল। খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার। সবার হাতে কাগজের বাটি ধরিয়ে দিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে দেয়া হল। তারপর সবার বাটিতে একচামচ ফ্রি ধোঁয়া ওঠা নুডুলস স্যুপ দিল। মাঠে তখন শন পাপড়ির মত ঘিয়া রঙের রোদ আর মাঠের পাশে ম্যাগির হলুদ রঙের ভ্যান। কিন্তু স্যার বললেন, বাটি নিয়ে ক্লাসে চলে যেতে হবে।
প্রথমে কিছুক্ষণ সবাই রাগারাগি করলাম, এইভাবে নুডুলসের জন্য লাইনে দাঁড়াতে প্রেস্টিজে লাগে। নুডুলস পাওয়ার পর রাগ করলাম- এত অল্প দিল।
আজো চোখে ভেসে ওঠে স্কুলের বাগানের রাশি রাশি ফুল। গেট দিয়ে ঢুকতেই ডানদিকের বাগানে হেসে উঠত একরাশ গাঢ় নীল অপরাজিতা, সাথে যোগ দিত থোকা থোকা হলুদ কমলা গাদা ফুল আর ছোট্ট ছোট্ট গোলাপি রঙের নয়নতারা। স্কুলে আমাদের প্রিয় খেলা ছিল নয়নতারার পাপড়ি নখে লাগানো, নরম নরম পাপড়ির নখ পরে গান গাইতাম “আমাদের দেশটা স্বপ্ন পুরী, সাথি মোদের ফুল পরী ...। পশ্চিমদিকের বাগানে ছিল লাল লাল জবা আর স্থল পদ্ম। একদিন ম্যাডাম বললেন, আজ ফুলের বিভিন্ন অংশ শেখাব, যাও বাগান থেকে জবা ফুল নিয়ে এস। আমরা দুজন ছুটলাম জবা ফুল ছিঁড়তে। ফুল ছিঁড়ছি আর দূর থেকে দেখে দারোয়ান ভাই ছুটে আসছে। চিৎকার করে বললাম...আরে প্র্যাকটিকালের জন্য তো, দারোয়ান ভাই, ম্যাডাম বলেছে। দারোয়ান বিশ্বাস আর
অবিশ্বাস মেশানো চোখে তাকিয়ে রইল আর আমরা বিজয়ীর ভঙ্গিতে ফুল নিয়ে ক্লাসে চলে গেলাম।
কলেজের দিনগুলো ছিল রংধনুর মত, প্রতিটি দিন নিত্য নতুন অভিজ্ঞতা আর অনেক অনেক দুষ্টুমি।
কলেজ শিফটে এসেম্বলিতে জাতীয় সঙ্গীত গাইত সবাই যদিও ...“আমি তোমায় ভালবাসি” এই অংশে এসে ছেলেদের গলার আওয়াজ একটু বেশি-ই শোনা যেত। হারুন স্যার ফিজিক্সের হাজারো তত্ত্ব পানির মত করে বোঝাতেন। কামাল স্যার ফিজিক্সের সাথে সাথে ছাত্র ছাত্রীদের নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা, নিষ্ঠার মত অমূল্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অর্জনে সহায়তা করতেন- সোজা বাংলায়- পুলাপান রে দৌড় এর উপর রাখতেন। ক্লাসের ছেলেদের চুল ছোট রাখার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে কামাল স্যার এর একটা অব্যর্থ টোটকা ছিল- প্রায়ই তিনি ঘোষণা দিতেন, যদি কোন ছেলের মাথার চুল লম্বা রাখে, তাহলে ক্লাসের সবার কাছ থেকে চাঁদা তুলে তিনি কাঁচি কিনবেন আর সেই চুল কেটে দেবেন। বলাই বাহুল্য, এই হুমকির পর ছেলেরা সাবধান থাকত। মজার ব্যাপার হল, অতশত হুমকি ধামকি দিয়েও সবার মনের অনেকখানি জায়গা জুড়ে ছিলেন কামাল স্যার। 
ক্লাস বাদ দিয়ে পেছনের প্রাইমারী স্কুলের নিচু দেয়াল টপকে কে কে পালাল, ঠিকমত পড়াশোনা করছে কিনা সবাই, এইসব দিকে তীক্ষè দৃষ্টি ছিল ক্লাস টিচার সুব্রত স্যারের। একটা সাধারণ কথা বলার সময়ও স্যারের অসাধারণ শব্দচয়ন আমাদের মুগ্ধ করত। ফলাফল- সুদর্শন একজন স্যার কাব্যিক ভাষায় আমাদের বকা দিচ্ছেন, আর আমরা তন্ময় হয়ে শুনছি।  
জীবনে প্রথম ব্যাঙ-এর পরিপাকতন্ত্র দেখার জন্য বায়োলজি ল্যাবে গিয়েছি। ব্যাঙ কাটা শেখানো হবে শুনে সবাই একটু আধটু ভয় পাচ্ছে। আমার এক বন্ধু বলল- এইটা আর এমন কি, এইসব আমার কাছে ব্যাপার না। ব্যাঙ কাটা শুরু করতেই ও একটা ওয়াক শব্দ করে দৌড় দিল। পরে আমরা সবাই ওকে খেপানো শুরু করলাম আর ও শুকনা মুখে বার বার দাবী করতে লাগল- নারে আজকে আমার কেমন যেন জ্বর জ্বর লাগছে। ঘটনাচক্রে সেই ভদ্রলোক আজ একজন সফল চিকিৎসক।
কলেজের ছেলে মেয়েদের শিক্ষা সফরে নিয়ে যাওয়া হল গাজিপুরের নাহার গার্ডেনে। সেখানে গিয়ে দেখি শহরেরর ধুলো ভরা মাটিতে কাচাপাকা ঘাসের বিছানা, আর চারপাশে সারি সারি গাছ। ডারউইনের থিওরি প্রমাণ করার জন্যই বোধহয় কিছু ছেলে তর তর করে গাছে উঠে পড়ল। এর মধ্যে টিচাররা ঘোষণা দিলেন, ছেলেরা আর মেয়েরা আলাদা পিকনিক করবে। এবার হাসির হুল্লোড়
উঠল। তবু মজা কম হয়নি। র‌্যাফেল ড্র তে একজন স্যার (মনে হয় নূর হোসেন স্যার, তখন তিনি মাত্র প্রতিষ্ঠানে এসেছেন) বড় একটা বালতি জিতলেন। ট্রফির মত দুই হাতে ধরে সেই বালতি নিয়ে স্যার বিজয়ীর ভঙ্গিতে একটা দৌড় দিলেন।
স্কুলের বিল্ডিঙে প্রাণসঞ্চার করেছিল আমাদের শ্রদ্ধেয় টিচাররা, হাজারো ছাত্র ছাত্রীরা। মুখচোরা ছাত্র/ ছাত্রীটা স্কুলে এসে মুখর হয়ে উঠত, দুষ্টু মেয়েটা রোকসানা ম্যাডমের সামনে টু শব্দ করত না। কে কোন বছরে বাংলায় কত পেয়েছে, রোকসানা ম্যাডামের মুখস্থ ছিল। আফসার স্যার, আক্তার স্যার, আকমল স্যারের মুখ অন্ধকার হলেই ছাত্ররা সাবধান হয়ে যেত, বকা দেওয়ার প্রয়োজন হত না। স্কুল আলোকিত হয়ে থাকত আমাদের স্বপ্নের ফানুস দিয়ে, মুখরিত হয়ে থাকত আমাদের নিত্যদিনের খুনসুটি দিয়ে আর মাঝে মাঝে নড়ে চড়ে উঠত আমাদের পায়ের শব্দে।
স্কুলের স্মৃতি অসমাপ্ত রয়ে যাবে যদি প্রিন্সিপাল স্যারের কথা না বলি। আজো কোন এক রাংতা পরা ভোরে স্কুলে কান পাতলে শুনতে পাবেন আমাদের প্রিন্সিপাল স্যারের গগনবিদারী হাসির শব্দ। প্রাণখোলা এই মানুষটা সারাজীবন স্কুলের জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নাওয়া খাওয়া ভুলে অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন।  বাবা হয়ে আগলে রেখেছিলেন ছাত্র
ছাত্রীদের, শাসনে সোহাগে ভরিয়ে রেখেছিলেন সবাইকে। সবার অভিযোগ, অনুযোগ, আবদার হাসিমুখে শুনেছেন কিন্তু নিজের জন্য কখনো কিছু চান নি। স্কুলের উন্নতির কথা বলতে বলতে তার মায়াভরা চোখ জ্বল জ্বল করে উঠত। গর্ব করে বলতেন- বাংলাদেশের যেখানেই যাও আমার ছাত্র ছাত্রী পাবেই। নীরবে নিভৃতে দিনের পর দিন প্রাণের অর্ঘ্য সমর্পণ করেছেন এই পাদপীঠে, তার সাধনা বয়ে এনেছে এই প্রতিষ্ঠানের সাফল্য। স্বপ্ন দেখেই তিনি ক্ষান্ত হন নি, স্বপ্ন পূরণ করে দেখিয়েছেন সবাইকে।
প্রতিষ্ঠানের ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক সবার জন্য তার মনের দুয়ার ও তার ঘরের দুয়ার ছিল খোলা। শিক্ষকদেও শুধু সহকর্মী নয় বরং পরম সুহৃদ মনে করতেন। স্বপ্নের ফেরিওয়ালা আজ না ফেরার দেশ থেকে আমাদের প্রতিদিন দেখছেন, প্রাক্তন, বর্তমান সকল ছাত্র ছাত্রীর ছোট বড় সব প্রাপ্তির সাক্ষী হয়ে থাকছেন। তার একটা নির্বাক ছবি নতুন অডিটোরিয়ামের দেয়ালে, আর লাখো ছবি আমাদের
হৃদয়ে স্বপ্নের রসদ যোগায়। যার কাঁধে ছিল এত বড় প্রতিষ্ঠানের ভার, তার হৃদয় ছিল কাব্যরসে টইটম্বুর। স্কুল নিয়ে তার লেখা গানের লাইনগুলো আজো ছুঁয়ে যায় আমাদের-
আমাদের সুপ্রিয় রাইফেলস কলেজ নেইকো তার তুল
মোরা এখানে শিক্ষা লাভ করি, শত শত মুকুল ।
প্রথাগত জীবনের আটপৌওে স্বাধীনতা যখন ক্লান্ত করে তোলে, মন তখন আঁকড়ে ধরতে চায় ফেলে আসা দিনগুলোকে। কোন এক অলস দুপুরে সময়ের ধুলো ঝেড়ে স্মৃতিগুলোর হিসাব নিকেশ নিয়ে যখন বসি, স্কুলের সেই সোনালী দিনগুলো ফিরে আসে হৃদয়ের ডেস্কটপে।

রেজোয়ানা ইসলাম মুনমুন
এসএসসি-২০০২, এইচএসসি-২০০৪
শিক্ষক, ম্যাপল লীফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল




স্মৃতির রঙধনুতে লেখা দিনগুলি


বাংলাদেশ রাইফেল্স- সে এক অসাধারণ নাম, যা আজো আমার স্মৃতির পাতায় লেখা আছে। জীবনের প্রথম স্কুলিং এখানে না, তবুও এই কলেজের সাথে, এই জায়গাটির সাথে আমার অন্যরকম সম্পর্ক রয়েছে। আমার প্রিয় কলেজ। বাবার ব্যবসার কারণে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ছেড়ে রাজধানী ঢাকায় আসা। সবেমাত্র নবম শ্রেণিতে উঠলাম। হঠাৎ করে নতুন একটা জায়গায় নতুন পরিবেশে এসে ভর্তি করলো আমাকে আব্বু। আমাদের প্রয়াত শ্রদ্ধেয় প্রিন্সিপাল স্যার মিয়া মো. মনিরুজ্জামান আমার বাবার বন্ধু মানুষ ছিলেন। আমাকে উনি সাদরে গ্রহণ করে নিলেন। আমি খেলাধুলা, শরীরচর্চা, গান, চিত্রাংকন, আবৃত্তি- এইসবে বেশ ভালই ছিলাম। স্যার তা জানতেন। উনি চাইতেন আমি যেন পড়াশোনার পাশাপাশি এইসব চালিয়ে যাই। নতুন পরিবেশ, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নতুন বন্ধু-বান্ধব- সব মিলিয়ে আমার খুব প্রিয় একটা জায়গাতে পরিণত হলো অল্প কয়দিনেই। আমার শিক্ষক-শিক্ষিকারা আমাকে বেশ ¯েœহ করতেন। এক কথায়, সবার আদরের ছিলাম আমি। সবসময় পড়াশোনায় নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতেন। রাইফেল্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে বের হয়ে এসেছিলাম সেই ২০০২ সালে। এরপর ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে পাঁচটি বছর একটানা পড়াশোনা করার পর চাকরি-স্বামী-২টা বাচ্চা আর সংসারে আমার হারিয়ে যাওয়া। তেমন কারো সাথে যোগাযোগ ছিল না। ছিল শুধু বান্ধবী সেলিনা, পপি আর অসীম স্যারের সাথে যোগাযোগ। সব ভুলে গেলেও ভুলে যেতে পারি নি আমার প্রিয় রাইফেল্স কে।
আমার প্রিয় রাইফেল্স কলেজের কথা বলতেই প্রথমে একটা দৃশ্যপটের কথা মনে পড়ে যায়- বিশাল এক সুন্দর সবুজে ঘেরা প্রকৃতির মাঝে শিক্ষার আলো নিতে আসা পাখিদের নীড় এই রাইফেল্স। ঠিক যেইরকম আমি চেয়েছিলাম, ঠিক ওইরকমই ছিল বড় মাঠ, বড় ক্লাসরুম। মোটকথা, সবুজের মাঝে আমি ছিলাম। যখন কালো মেঘে ছেয়ে যেত, ক্লাসরুমে আলো জ্বেলে আমরা বাইরের ঠা-া ঠা-া হিম হিম হাওয়ায় ক্লাস করতাম। তখনি হঠাৎ বৃষ্টিতে ভেজা মাটির গন্ধে মনটা বাইরের দিকে চলে যেতে চাইতো। শুধু মনে হতো কখন ছুটি হবে। আর আমি রাইফেল্স-এর আশপাশের সবুজে ঘুরে ঘুরে দেখবো। ঢাকা শহরের মাঝে এতো সুন্দর একটা পরিবেশ না দেখলে বোঝার উপায়ই ছিল না। আমার কলেজের পাশেই ছিল বিশাল এক পুকুর, খেলাধুলার মাঠ, ছিল গোলাপ বাগান, বাংলাদেশ রাইফেলস গভর্নমেন্ট অর্গানাইজেশন হওয়ায় অনেক রুলস আর রেগুলেশনস-এর কারণে আমরা সব সময় সব দিকে বিচরণ করতে পারতাম না। যেতে চাইলে বলতো আংকেল ওইদিকে যাওয়া নিষেধ। অন্যদিকে যান। তখন রাগ হতো আমাদের। আরেকটি কথা না বললে নয়, ডিফেন্স-এর ইউনিফর্ম তখনি খুব কাছ থেকে দেখা আমার। খুব ভাল লাগতো। তখন মনে হতো, যদি ইউনিফর্ম পরতে পারতাম, তাহলে সারাজীবন এই খানেই থেকে যাওয়া যেত। যাই হোক আমার ডিফেন্সের ইউনিফর্ম পরা হয় নি। কিন্তু জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছি একজন ডিফেন্স অফিসারকে। ও ডিফেন্সে থাকায় আমার নানা জায়গায় ঘোরা হয়। মজার ব্যাপার হলো, যে রাইফেল্স এর গেটে আমার পারমিশন নেয়া লাগতো আজ ওখানে যেতে আমাকে স্যালুট-এর মাধ্যমে সম্মান দিয়ে গ্রহণ করে নেয়। আমি গর্বে মাথা উচু করে যেতে পারি। যেখানে যাওয়া নিষেধ ছিল, সেখানেও যেতে কোনো বাধা নিষেধ নাই। কারণ আমিতো এখন ডিফেন্স পরিবারের সদস্য।
কিন্তু তখন যে আনন্দ ছিল লুকিয়ে লুকিয়ে না বলে এদিক সেদিক যাওয়ার, এখন ওই আনন্দটা কই? আমি খুব বেশি মিস করি সেই দিনগুলিকে। আমি সব সময় কৃতজ্ঞ থাকবো আমার প্রয়াত প্রিন্সিপাল মিয়া মো. মনিরুজ্জামান স্যারের প্রতি। কৃতজ্ঞ থাকবো, আমার সকল শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রতি, যাদের কষ্ট, ধৈর্য আর ভালবাসার কারণে আজ আমি নিজেকে একটা জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। আমি গর্ববোধ করি এই রাইফেল্স কলেজের এক্স-স্টুডেন্ট হতে পেরে।

স্থপতি হোসনী রেজা চৌধুরী
এসএসসি-২০০০, এইচএসসি-২০০২
সিনিয়র আর্কিটেকচারাল ডিজাইনার, স্থপতি সংসদ লি.   




ফিল্ম মেকার হবার পেছনে বিদ্যালয়ের ভূমিকা ওকিছু প্রাসঙ্গিক, অপ্রাসঙ্গিক কথা ...


লিখাটি শুরু করতে বসার পর পরই ঘুরে ফিরে একটা কথাই বারবার মাথায় আসছে: একটা কুকুর ‘কুকুর’ হিসেবেই জন্ম নেয় ; মারাও যায় কুকুর হিসেবেই। একটা বাঘ বা একটা বিড়ালের বেলায়ও তাই। এমনকি একটা সাপও জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি সাপই, অন্য কিছু নয়। একটা সাপ ‘সাপ’ ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না। কিন্তু জন্ম নেবার পর মানুষ ‘মানুষ’ হিসেবে থাকবে কি না তা বলা মুশকিল! মৃত্যুর সময়েও সে মানুষ হিসেবেই মৃত্যুবরণ করবে কিনা তা কেউই বলতে পারে না।

আমি যখন ছোট ছিলাম তখন গুরুজনরা বলতেন, ‘বাবা, মানুষ হও’। শুনে আমি অবাক হতাম! তাহলে কি আমি মানুষ নই? আমি তাহলে কী?

মানুষের আসলে সুবিধা অনেক। সে ইচ্ছে করলেই অন্যকিছু হয়ে উঠতে পারে! একটা কুকুর বা বেড়ালের সে সুযোগ বা ক্ষমতা নেই। একটা কুকুর ইচ্ছা করলেই হাতি হতে পারে না। একটা বিড়াল চাইলেই বাঘ হতে পারে না। মানুষ তার মুখের আদল অবিকৃত রেখেও তার স্বভাব বেশে হয়ে উঠতে পারে অন্য কিছু। এর জন্য তার মুখোশ দরকার পড়ে না।
আমার জানা মতে পরিবার হচ্ছে শিক্ষা গ্রহণের প্রথম এবং আদর্শ স্থান। আমার পরিবারের পরে আমাকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে নিজের অস্তিত্ব আবিষ্কারের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে আমার বিদ্যালয়ের ; তথা আমার শিক্ষকবৃন্দের। আমার বিদ্যালয়ের গৌরবের ৩০ বছর পূর্তিতে নিজের সশরীরে উপস্থিতি থাকতে পারাটা আমার কাছে অনেক গর্বের। গত ৩০ বছরে আমার বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্র-ছাত্রী পরকালে পাড়ি জমিয়েছেন। তাদের বিদেহী আত্মার প্রতি মাগফিরাত কামনা করছি। তাছাড়া অনেকে জীবন-জীবিকার তাগিদে পরবাসী হয়েছেন। বিদ্যালয়ের এই গৌরবের দিনে প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তারা হয়তো সশরীরে আমাদের মাঝে উপস্থিত হতে পারে নি। তবুও আমি তাদের পরোক্ষ উপস্থিতি অনুভব করছি। আমার বিদ্যালয়ে আমি ‘দুরন্ত’ ছাত্র হিসেবেই চিিহ্নত ছিলাম। মাঝে মাঝে অনিয়ন্ত্রিত দুরন্তপনার কারণে প্রয়াত প্রধান শিক্ষক, পরে অধ্যক্ষ ‘মিয়া মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান’ স্যারের শাসনের সম্মুখীন হতে হতো। আজ বুঝতে পারছি স্যারের সেই শাসন আমাকে ‘মানুষ’ হিসেবে গড়ে ওঠার পথে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। লিখাটি যখন লিখতে বসি, তখন খুব আয়েশী ভঙ্গিতে নিজেকে আবিষ্কারের চেষ্টা করি, কিন্তু কখন যে স্মৃতিকাতর হয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়েছে টেরই পাই নি। পেতামও না, যদি তার কয়েকটি ফোঁটা আমার লিখার খাতায় না পড়তো।
আমার এই ছোট্ট জীবনে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা আমাকে আজো স্মৃতিকাতর করে দেয়। তার মধ্যে এই মুহূর্তে মনে পড়ছে, আমার এস.এস.সি পরীক্ষার রেজাল্টের দিন, প্রথম কলেজে যাওয়ার দিন, প্রথম বিদেশ ভ্রমণ, জীবনে প্রথম শূটিং-এর দিন, দুই বাংলার জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান ‘মিরাক্কেল’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবার দিন ইত্যাদি। প্রসঙ্গে বলে রাখি, আমি একজন নাট্য নির্মাতা। আশা করি, ভবিষ্যতে চলচ্চিত্র নির্মাণ করবো। পেশা হিসেবে আমার পাসপোর্ট ও ফেসবুক প্রোফাইলে আমার পেশা ‘ফিল্ম মেকার’। যদিও-বা স্কুল/ কলেজ জীবনে নিজের পেশা হিসেবে রূপালি পর্দায় কাজ করাটা কখনও মাথায় আসে নি। হ্যাঁ, স্কুল জীবনে আমার প্রিয় বিষয় ছিল ‘সহ-শিক্ষা’, সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার শেষ ক্লাস ছিল সহ-শিক্ষা। ক্লাসটি অনেকটা ঐচ্ছিক থাকাতে অনেকে বাসায় চলে যেতো। ধীরে ধীরে আমার অনুরোধে অনেক ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি বেড়ে যায়। আমি জানি না বিদ্যালয়ের কয়েক হাজার প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে আমার মত পেশার আরও দু’এক জনকে পাওয়া যাবে কি না। ব্যবসা, আইন পেশা, সরকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তা, গায়ক-গায়িকা, নায়ক-নায়িকা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সামরিক কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, শিক্ষকতাসহ অন্যান্য পেশার প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে আমার পেশা বড়ই মলিন। তবুও গর্বের সাথে একটি কথা বলতে পারিÑ ‘আমি এখনও আমার বিদ্যালয়ের সাথে সরাসরি জড়িত’। কিভাবে? বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত ভ্রমণ বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘চলো যাই অজানায়’ সার্কুলেশনের দায়িত্বে যে নামটা আছে আমি তার গর্বিত অধিকারী। আমার সাংস্কৃতিক জগতে বিচরণের প্রধান অনুপ্রেরণা বিদ্যালয়ের সেই ‘সহ-শিক্ষা’ ক্লাসের কিছু শিক্ষা। সেখানে সহ-শিক্ষার মানে জানতে পারি, বিনোদন বা ছোট খাটো খেলার মাধ্যমে জ্ঞানের বিকাশ সাধন করার নামই হচ্ছে সহ-শিক্ষা।
সেই অনুপ্রেরণা আজ আমাকে নির্মাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। যে বিদ্যালয়ে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি সহ-শিক্ষা নামক বিষয়ের মাধ্যমে এই শিক্ষা দেয় যে, ‘জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে জ্ঞানী হওয়ার পাশাপাশি সত্যিকারের মানুষ হওয়া অনেক জরুরি। আমি সেই স্কুলের একজন গর্বিত ছাত্র। তাই আজ নিঃসংকোচে বলতে পারি, আমার একজন নির্মাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার জন্য আমার পরিবার-পরিজনসহ অন্যান্য অনেকের মত আমার বিদ্যালয় তথা বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পরিশেষে আমার বিদ্যালয়ের সাবেক, বর্তমান সকল শিক্ষক, শিক্ষিকা এবং বিদ্যালয়ের ৩০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের সমন্বয়কারী সকল সদস্য, সদস্যাবৃন্দসহ এই লেখার সকল পাঠক-পাঠিকার প্রতি একটিই অনুরোধ রইলো: ‘ক্ষমা মহৎ গুণ’। তাই আমার লেখার অনিচ্ছাকৃত ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে আমার মত ক্ষুদ্র মানুষকে ধন্য করার পাশাপাশি নিজেদের মহৎ গুণকে সদা সমুন্নত রাখবেন।

শাহাদাৎ হোসেন জীবন (জীবন শাহাদাৎ)
এস.এস.সি ১৯৯৭ 
নির্মাতা ও পরিচালক



রউফ কলেজের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের তথ্য সংগ্রহ করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। আপনার তথ্য জানতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 




বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ থেকে যারা ২০১৩ সনে ও ২০১৪ সনে েএসএসসি অথবা ২০১৫ সনে ও ২০১৬ সনে এইচএসসি পাশ করেছে প্রতিষ্ঠান থেকে তাদেরকে তাদের বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার তথ্য জানাতে আহ্‌বান করা হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ এসব প্রাক্তন শিক্ষার্থীর তথ্য কলেজ থেকে প্রকাশিত বার্ষিক ম্যাগাজিন ‘প্রতিভা’য় তুলে ধরবে। তাই যারা উল্লিখিত সনে উল্লিখিত ব্যাচের শিক্ষার্থী তাদেরকে এখানে তাদের তথ্য সাবমিট করতে অনুরোধ করা হলো। 


এখানে ক্লিক করে তথ্য ফরমটি পূরণ করুন


অথবা 

তথ্য প্রদান করতে নিচের ছবিতে ক্লিক করুন







২০১৭ সনের জন্য স্কুল শাখায় ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবিলিক কলেজ এবং  বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজে ২০১৭ সনের জন্য বিভিন্ন শ্রেণিতে ভর্তির বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে। রউফ কলেজে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে। নূর মোহাম্মদের ভর্তির ফরম বিজিবি’র ৪নং এবং ১নং গেট সংলগ্ন ব্যাংক এশিয়া’র বুথ থেকে সংগ্রহ করতে হবে। 

রউফ কলেজে ভর্তির জন্য নিচের লিংকে ক্লিক করে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।




https://www.abdurroufcollege.ac.bd/online-admission



Apply Online : Birshreshtha Munshi Abdur Rouf Public College

Go to Online Admission on College Website


https://www.abdurroufcollege.ac.bd/online-admission

      Read all rules carefully, click Agree & Continue


https://www.abdurroufcollege.ac.bd/online-admission


Help Line: 01831830579 (8am-10pm)


Admission Circular


Admission Notice of Noor Mohammad College




Click  here to apply Rouf College


স্মৃতি- স্বীকারোক্তি


মেঘে মেঘে গড়িয়ে গেল অনেক বেলা। বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ এখন ৩০ বছরের পরিপূর্ণ যুবক। আজ থেকে প্রায় ১৬ বছর আগের এক কিশোর রাইফেল্্স স্কুল ও কলেজের সাথে প্রথম মিতালি। যাঁর প্রণোদনায় আমরা এ প্রাঙ্গণে মিলেছিলাম তিনি আমাদের সবার প্রিয় অধ্যক্ষ মিয়া মো. মনিরুজ্জামান স্যার। পিতৃসম শ্রদ্ধেয় স্যারের সুচারু দিক নির্দেশনায়, তাঁর আদরে-শাসনে বেড়ে উঠেছিলাম আমরা। যার নির্যাস ছড়িয়েছিলাম কিশলয়দের। তাদের অনেকে এখন বৃক্ষ। ভাবতে ভালো লাগে আজ এতো বিশাল এর পরিধি।

স্কুলে ডে-শিফটে ছাত্র -পেটাতে যাঁরা ছিলেন ওস্তাদ, নিঃসন্দেহে আমি তাঁদেরই একজন। এখনো অনেক পুরনো ছাত্র দেখা হলেই বলে ওঠে, ম্যাডাম আপনার লাল বেতটা কই? ... আমি যখন student ছিলাম তখন আমার ঐকান্তিক ইচ্ছা ছিল যে ছাত্রদের পিটিয়ে পিটিয়ে ব্যাকরণ শেখাবো। তার যথার্থ প্রাপ্তি ঘটলো এ স্কুলে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রদের পড়িয়ে। কত দুষ্টু ছাত্র যে পেলাম জীবনে! মার-টার খেয়ে কেমন করে যেন তারাই আবার প্রিয় হয়ে যেত। ছেলেরা আড়ালে আমাকে ‘রাখাল ম্যাডাম’ বলতো। কেননা আমিই ওদের বলতাম, তোরা সব গরু-ছাগল আর আমি তোদের চরাই, সুতরাং...।

শিক্ষকতার মুড়িঘণ্ট





কী এক অদ্ভুত কারণে নবম শ্র্রেণিতে পড়া কালীন ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল, বড় হয়ে একদিন শিক্ষক হব। তাও আবার সরকারি কলেজে। বর্তমানে তা হতে পেরেছি বলে এখন বলাটা অনেকটা চাপাবাজির মত শোনাতে পারে। মনের গহীনে লুকানো বাঞ্ছাটি পূর্ণ হওয়ার মত পরিপূর্ণ বাস্তবতা অবগাহনের সুযোগ আমার মিল্লই বটে। ২৮তম বিসিএস এর সুবাদে এখন আমি আমার অভ্যন্তরীণ কল্পনার বাস্তব রাজ্যে বিচরণ করছি।  তবে, লোভী মনটা আর পারিপাশ্বিক চাপের কারণে অন্য কিছু যে হতে চাইনি, তা কিন্তু সত্যি নয়। মনের গহীনে অনেক রঙিন স্বপ্নের আনাগোনা কার না থাকে। বহুধা বিভক্ত স্বপ্নরাশি চতুর্দিক থেকেই তারা করত বটে। আবার কিছু উপ-স্বপ্ন, কিছু সহ-স্বপ্ন তো উঁকি মারত-ই। কখনও প্রশাসক, কখনও সংবাদ পাঠক হওয়ার ইচ্ছে জাগত। কখনও বা সিনেমার কমেডিয়ান। এগুলো বাহ্যিকতা বা পারিপাশ্বিকতা। অবশেষে দ্বিতীয় বার বিসিএস এ যখন আবারও শিক্ষা ক্যাডার পেলাম। তখন মনের ভেতরের মানুষটি আর বাইরের মানুষটির জন্য একই ধারা, একই সুর হয়ে শিক্ষকতাই হয়ে রইল কর্মযজ্ঞের এক রহস্যময় আধার।

রাইফেলস কলেজ : যেখানে যৌবন আমার




এ লেখা যখন লিখছি, যখন সেটি ছাপা হয়ে প্রকাশ পাবে, তখন আমার বয়স একান্নোর কোঠা ছুঁই ছুঁই। সুদূর কানাডার টরন্টো শহরে বসে লিখছি। তাগিদটা দীর্ঘকালের সহকর্মী নূরুল ইসলামের। রাইফেলস কলেজের দীর্ঘ অতীত নিয়ে, সে অতীতের সাথে সম্পর্কের স্মৃতি নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নূরুলের তাগিদে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে ল্যাপটপে বসেছি কিছু লেখার জন্যে। যে কর্মস্থলে যৌবনের চৌদ্দটা বছর পার করেছি, যেখানে আমার মননের নির্মিতি ঘটেছিল, সে কলেজের তিরিশ বছর পূর্তিতে বই বেরুবে, আর তাতে আমার লেখা থাকবে না, তা তো হবার নয়! তেমন বোধ থেকেই এ লেখার প্রয়াস। 


শুরুতেই আমার নিজেরই প্রশ্ন নিজের কাছে- কী নিয়ে হবে লেখাটা? যদি সেটি রাইফেল্স কলেজের ইতিহাস নিয়ে হয় তাহলে সেটি লেখার জন্যে অনুপযুক্ত আমি। প্রথমত সন-তারিখের ব্যাপারে আমি কাঁচা। তাছাড়া কলেজের ইতিহাস লেখার জন্যে সেখানে রয়ে গেছেন যথেষ্ট উপযুক্ত বেশ ক’জন পুরোনো মানুষ। তাহলে কী নিয়ে হবে এ লেখা? সে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারলেও কী-বোর্ড চালিয়ে যাচ্ছি। দেখা যাক না! একটা জিনিস তো ঠিক, রাইফেলস কলেজ নিয়ে বই হবে, সেখানে আমি থাকবো না, তা হতে পারে না! লেখার ভালো-মন্দের বিচার পরে করা যাবে। আগে লেখা...
আমি জানি লেখাটিতে কলেজে আমার কর্মকালের স্মৃতিকথাগুলো ঢুকে যেতে পারে সহজেই। প্রশ্নটা হচ্ছে সে স্মৃতি জেনে কার কী লাভ হবে? পাঠক হিসেবে বর্তমানে সেখানে যে শিক্ষকেরা কর্মরত আছেন, তাদের কাছে আমার স্মৃতি হাতড়ানোর কোনো দাম আছে কি? পুরোনো যাঁরা, অর্থাৎ আমাদের সময়ে সেখানে কর্মরত ছিলেন যাঁরা তাঁদের কাছে হয়তো একটা নস্টালজিক ভাব কিছুটা আসলেও আসতে পারে। আর যাঁরা আমি সে প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করে চলে আসার পর সেখানে প্রবেশ করছেন, তাঁদের কাছে এ লেখার কোনো মূল্য আছে কি না আমি অনিশ্চিত।
তার চেয়ে বরং আসুন নিজের ঢোল নিজেই পেটাই। কোথায় আছি, কী করছি এইসব আর কী। ঢোলের শব্দে হয়তো পুরোনো জিনিস পরিস্ফুটিত হবে, অধিকতর মূল্যবান হয়ে উঠবে, যেমন এই মধ্যবয়সে এসেও দুর্গাপূজায় ঢাকের বাদ্য শুনলে আমার মনে পড়ে যায় সেই কৈশোরকালের দিনগুলোর কথা। জন্মগ্রাম মছলন্দপুর আর বেড়ে ওঠা বাজার কামারখালির কথা।


বলা যায়, যা যা কাজ আমি করি, সবগুলোর প্রসঙ্গেই যে বোধিবৃক্ষের কথা আমার মনে আসে সেটি হলো রাইফেলস কলেজ। এইসব মনে আসা প্রসঙ্গে বলে রাখতে চাই, আমি আসলে খুব স্বপ্নচারী মানুষ। খুব প্রেমিক মানুষ। নতুন কাজের স্বপ্ন দেখলে সেটির প্রতি আমার প্রীতিটা এতটাই গভীর হয়ে যায় যে, আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে যায় যেন। এমন কিছু স্বপ্ন নিয়ে টরন্টোতে আমার দিন চলা। তেমন সব স্বপ্ন নিয়েই হয়তো আজকের এ লেখা। 

রউফ কলেজ ‘৩০ বছর পূর্তি : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’


মনে পড়ে, খুবই মনে পড়ে। স্মৃতির কোঠায় জ্বল-জ্বল করে জাগরিত। মনে পড়ে আজ থেকে ৩০ বছর আগে পিলখানার এই সবুজ চত্বরে এক মাহেন্দ্রক্ষণে, অনাড়ম্বর পরিবেশে যাত্রা শুরু তৎকালিন বাংলাদেশ রাইফেল্‌স হাই স্কুল বর্তমানের এই বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের।
বাংলাদেশ রাইফেল্‌স-এর তৎকালিন  মহাপরিচালক র.আ.ম. গোলাম মোক্তাদির প্রাথমিক শিক্ষা শেষে বিশেষ করে বিডিআর সন্তানদের শিক্ষার কথা বিবেচনায় রেখে হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব অনুভব করেন। এক্ষেত্রে তৎকালিন বিডিআরের এক শহীদ সদস্যের সন্তান জাকির হোসেন মিলন ও তার বন্ধুরা মাননীয় মহাপরিচালকের কাছে হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার নিবেদন জানালে তিনি সানন্দে হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার অনুমতি প্রদান করেন।

বাংলাদেশ রাইফেল্‌স-এর তৎকালিন উপ-মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার আইনুদ্দিন স্যার ও পরিচালক, যোগাযোগ কর্নেল মকবুল হায়দার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করায় যাত্রা শুরু হয় রাইফেল্‌স হাই স্কুলের। সময়টি ছিল ১৯৮৪ সাল। মাঠের একপাশে তাবু ঘেরা ছাউনিতে শুরু হয় প্রথম ক্লাস। প্রথম শিক্ষক হয়ে আসেন সহকর্মী এমডি মহিউদ্দিন স্যার। সেই থেকে পথ চলা শুরু।
ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত মাত্র ১৫০ জন শিক্ষার্থী এবং ১১ জন শিক্ষক নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যালয়টির গোড়াপত্তন হয়। ১ জানুয়ারি ১৯৮৪ থেকেই জুনিয়র হাই স্কুল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং একবছরের মধ্যেই এটি হাই স্কুল হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৮৬ সালে ২৩ জন ছাত্র-ছাত্রী বিজ্ঞান ও মানবিক শাখায় প্রথমবারের মত এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়-এরপর থেকেই ইতিহাসের যাত্রা শুরু হয়।

মিলন হবে কত দিনে...


আত্মগত :

এ কোনো অধ্যাত্ম চেতনা উৎসারিত আকুতি নয়, নয় যক্ষ্মপ্রিয়ার বিরহী যক্ষ্মের সাথে মিলিত হবার কোনো প্রণয় আকাক্সক্ষা কিংবা কোনো পরমাত্মার সাথে জীবাত্মার নির্বাণ সম্মিলনের উদগ্র প্রেষণা। প্রায় একযুগ ধরে ক্ষুণিœবৃত্তির তাড়নায় পরিযায়ী পাখির মতো দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছি। কখনো উত্তরের কুহেলী ঘেরা বাতাবরণ তো কখনো গাঙ্গেয় পলল বাহিত জলজ ছোঁয়ায় কম্পিত প্রহর, আবার বরেন্দ্র মৃত্তিকার ভঙ্গিল ভূমিরূপতা থেকে রক্তাক্ত জনপদে ভয়ার্ত বিচরণ। ফেরা হয় না প্রাণোচ্ছ্বল, উচ্ছ্বাসমুখর সবুজাভ তারুণ্যে, যৌবনদীপ্ত প্রগলভতায় কিংবা মন্দ্রিত সন্ধ্যার আলো আঁধারির নিমগ্নণ মায়ায়। সে মিলনের আকুতি থেকে আত্মগত ভাবনার ধূসর স্মৃতিময় প্রত্যাভিজ্ঞা। চেতনায় ফিরি না শরীরে না সত্তায়। 
বন্ধুতা আর মিত্রতার সরলরৈখিক ধারায় বৈরি বিপন্ন আবহ যে উদ্ভূত হয় নি, তা নয়। অরিন্দমই, কে অদৃশ্য, অদৃশ্য অশুভ ছায়া খুঁজতে যাই নি কখনো, তবে যেখানে যতটুকু চন্দন চূর্ণের মতো সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি-ভালবাসা মিলেছে তা আঁকড়ে ধরতে চেয়েছি প্রাণপণে। বিচ্ছিন্ন সত্তার হাহাকার গুমরে গুমরে কেঁদেছে অতীত উন্মীলিত অবারিত ছায়া সমাচ্ছন্ন নিবিড়তায়। তার কিছু অনুরণন মন্দ্রসপ্তকে আভাসিত।

ক্যান্ট-৮৬:

প্রতি বছরই বন্ধুরা একটি আয়োজনের ডালি সাজিয়ে আহ্বান করে সুখ সম্মিলনের কলকাকলিতে। গজারি বনের শ্যামলিমায় লাল মৃত্তিকার পায়ে হাঁটা মেঠোপথ আর শৈশব-কৈশোরের বর্ণিল উচ্ছ্বলতায় অবগাহন করতে মন যে চায় না তা নয়। দু’একবার সে স্বাদ গ্রহণ করা হয়েছিল কিন্তু প্রতিবার আর যাওয়া হয় না। গত বছরের শেষার্ধেও এরকম সুখ-সম্মিলনের ডাক এসেছিল। মুখপুস্তিকায় বন্ধুদের আনন্দ অনুভূতি লাইক দিয়েছি, শেয়ার করেছি, সশরীরে একাত্ম হওয়া হয়ে ওঠে নি।

রউফিয়ানস রিদম পরিবার



রউফিয়ানস রিদম পরিবার, ফটো ফিচার




চিত্রে ২০১৫ সনের একুশে বইমেলায় রউফিয়ানস রিদম নিয়ে রউফিয়ানদের হইচই-এর কিছু মুহূর্ত