বাংলাদেশের শিক্ষা ও শিক্ষক




আধুনিক বিশ্ব ব্যবস্থায় বাংলাদেশের শিক্ষা পরিস্থিতির বর্তমান গতি-প্রকৃতি কোনদিকে প্রবহমান?

 বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কেবলই কি জঙ্গি তৈরির কারখানা? এখান থেকে পাস করা গ্র্যাজুয়েটদের একটা বড় অংশ দুর্নীতি, বিদেশে অর্থপাচার, ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সঙ্গে জড়িত নয় কি? টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, হল দখল, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ছাত্রী নিপীড়ন, শিক্ষক লাঞ্ছনার সঙ্গেযারা জড়িত তাদের সিংহভাগই শিক্ষার্থী এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী তাহলে আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ঘাতক চাঁদাবাজ হওয়ার প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র? এই পরিস্থিতি থেকে আমাদের অবশ্যই পরিত্রাণ পেতে হবে
শিক্ষকরাই সমাজের অভিভাবক পথ তাঁদেরই দেখাতে হবে নতুন দিনের আলো তাঁদেরই নিয়ে আসতে হবে
ইউনেসকো ১৯৯৪ সাল থেকে অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন করার ঘোষণা দেয় শিক্ষকদের সম্মান স্বীকৃতি জানানোর জন্য বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হয় বিশ্ব শিক্ষক দিবসে তাই সব শিক্ষককে এই শপথ নিতে হবে, রাষ্ট্র যাই করুক, সমাজ যাই করুক আমরা স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে পারি না
বাংলাদেশ সরকার সব ধরনের শিক্ষকদের নতুন জাতীয় পে স্কেলের আওতাভুক্ত করেছে নিঃসন্দেহে এটি প্রশংসার দাবিদার অবহেলিত শিক্ষক সমাজ যদি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ প্রাপ্তির আওতায় পড়ে সবাই সাধুবাদ জানাবে; কারণ শিক্ষকরা সমাজের অভিভাবক, গণ্যমান্য বক্তি কিন্তু শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া এখনো স্বচ্ছ না হওয়ায় মানুষের মনে এক ধরনের দ্বিধা থেকে যাচ্ছে আমাদের বিশাল বহরের প্রাথমিক শিক্ষার বিশাল অংশই সরকারি, যেখানে মানের কোনো বালাই নেই, তবে শিক্ষকদের চাকরিটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনীতির দ্বারাই বেশি পরিচালিত হয় শিক্ষক নিয়োগ, ভর্তিপ্রক্রিয়া ছাত্ররাজনীতি সেখানে শিক্ষকদের মূল কাজ পড়াশোনা গবেষণা এখন গৌণ
একজন মেধাবী শিক্ষার্থী শিক্ষকতা পেশায় তখনই আসবেন যখন তিনি দেখবেন, তাঁর ওপরে ওঠার সিঁড়ি আছে অর্থাৎ একজন মেধাবী শিক্ষার্থী যদি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন তাহলে তাঁর মেধার কারণে তিনি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও হতে পারেন তাঁকে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নতুন করে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার জন্য দৌড়ঝাঁপ ছোটাছুটি যাতে করতে না হয় যে শিক্ষার্থী বা প্রার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন এবং তিনি যদি প্রাথমিক মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষকতা শুরু করেন, তাহলে আমরা কি  চিন্তা করে দেখতে পারি না তাঁর দ্বারা প্রাথমিক মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা কত বেশি উপকৃত হবে? এই শিক্ষককেই যদি পরবর্তী সময় শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক করা হয় তাহলে কি আমরা তাঁর কাছ থেকে চমৎকার শিক্ষার পরিবেশ আশা করতে পারি না? এখন কী হয়? একজন কলেজ শিক্ষক শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক হন এখানে অবশ্যই রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার বিষয় ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এই কলেজের শিক্ষক মহাপরিচালক কোনোভাবেই মাধ্যমিক শিক্ষকদের ব্যথা বুঝবেন না এবং বোঝেনও না
প্রাথমিক শিক্ষার ভিত হওয়া প্রয়োজন অত্যন্ত মজবুত, অত্যন্ত আকর্ষণীয়, যা সারা জীবন একজন শিক্ষার্থীর মনে থাকবে প্রাথমিকে শিক্ষার পরে ঝরে পড়লেও ওই শিক্ষার্থীর মনে যেন দাগ কেটে থাকে প্রাথমিকের শিক্ষাকাল কিন্তু বিশৃঙ্খল এই প্রাথমিক শিক্ষা অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না হলে একজন শিক্ষক শিক্ষকতা কাজে মনোনিবেশ করতে পারেন না তাই প্রাথমিক শিক্ষাকে পুরোপুরি অবৈতনিক করা হয়েছে আমাদের দেশে আমাদের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি একেবারে কম পাওয়া নয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রাথমিক শিক্ষা বাংলাদেশে অথচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আকর্ষণের কোনো কারণই বিদ্যমান নেই আর বেসরকারিগুলোতে শিক্ষকদের নেই কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ শিক্ষা পেয়েই আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ম্যাগনিফাই করে দেখানো হয় শিক্ষা খাতে কী কী করা হয়েছে, কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে আর আমরা যারা শিক্ষা নিয়ে চিন্তাভাবনা করি, তারা পত্র-পত্রিকার পাতায় কিছু মতামত তুলে ধরি, কিন্তু সেগুলো থাকে সমাধান থেকে অনেক দূরে
 শিক্ষার মান নিয়েও প্রচুর প্রশ্ন পাসের হার বাড়ছে হু হু করে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের দক্ষতা অর্জিত হচ্ছে না অর্জিত হচ্ছে না নৈতিক জ্ঞান, শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাগ্রত করা যাচ্ছে না দেশপ্রেম সব কিছুতেই শিক্ষকদের পালন করতে হবে অগ্রণী ভূমিকা কিন্তু মানসম্পন্ন মেধাবী প্রার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় আসছেন না শিক্ষক নিয়োগের জন্য আট-দশ-বারো লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয় কী পড়াবেন তারা? এগুলো দূর করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় চালু করল এনটিআরসিএ (নন-গভর্নমেন্ট টিচার্স রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেশন অথরিটি) এনটিআরসিএ থেকে পরীক্ষা দিয়ে সার্টিফিকেট অর্জন করতে হবে একমাত্র এই সার্টিফিকেটধারীরাই বেসরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষকতার জন্য আবেদন করতে পারবেন আশা ছিল শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীরা আসবেন কিন্তু ইদানীং জানা যাচ্ছে, হাজার হাজার জাল সার্টিফিকেট বিতরণ করছেন এনটিআরসিএর একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী এটি আবার ধরা পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরই মনিটরিং টিমের কাছে
আসুন, আমরা যে যেখানে আছি সেখান থেকেই চেষ্টা করি শিক্ষা ক্ষেত্রে শুদ্ধ পরিবর্তন নিয়ে আসার শিক্ষা খাতে কাঙ্ক্ষিত মৌলিক পজিটিভ পরিবর্তন নিয়ে আসতেই হবে জাতির বৃহত্তর কল্যাণের জন্য বিশ্ব শিক্ষক দিবসে এই হোক আমাদের স্লোগান

1 টি মন্তব্য: